৪০ টাকার কম সালামি নেয় না হাতি!
ঝালকাঠি শহরের বিভিন্ন সড়কে, অলিতে গলিতে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে পোষ্য হাতি দিয়ে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। হাতির আকস্মিক আক্রমণের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে বাধ্য হয়ে চাঁদা দিতে হচ্ছে জনগণকে।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের সড়কে প্রকাশ্যে হাতি দিয়ে চাঁদাবাজি করতে দেখা গেছে। মাহুত হাতি নিয়ে শহরের বিভিন্ন সড়কে, অলিতে গলিতে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়িতে, বিভিন্ন হাটবাজারে যাচ্ছেন। দোকানি, পথচারী বা গৃহকর্তার সামনে হাতি শুঁড় উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকছে। কেউ সালামি না দিলে সেখান থেকে নড়ছে না। এমনকি সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের সামনে দাঁড়িয়ে টাকা না দেওয়া পর্যন্ত সরছে না হাতি। এভাবে হাতির মাহুত সেলামির নামে চাঁদা তুলছেন। চাঁদা দিলে হাতি শুঁড় দিয়ে নিয়ে মাহুতকে দেয়। আর চাঁদা না পেলে উচ্চস্বরে হুংকার ছাড়ে। ভয়ে ব্যবসায়ী ও পথচারীরা বাধ্য হয়ে চাঁদা দিচ্ছেন।
এমন বাধ্য হয়ে টাকা দিতে দিতে চরম বিরক্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ী ও সাধারণ লোকজন।
হাতির মাহুত রাকিবুল ইসলাম বলেন, চাঁদা তো না, সালাম দিয়ে সাহায্য নিচ্ছি। সার্কাস বন্ধ থাকায় হাতি নিয়ে বিপাকে পড়েছি। হাতিকে খাওয়ানোর জন্য সাহায্য চাইতে চাইতে পিরোজপুর থেকে ঝালকাঠি শহর পর্যন্ত এসেছি।
দুপুরেই জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অল্প বয়সের একটি এবং ফায়ার সার্ভিস মোড় এলাকায় প্রাপ্তবয়স্ক একটিসহ মোট দু’টি হাতিকে চাঁদা তুলতে দেখা যায়।
শহরের বাজারের ব্যবসায়ী সিকেন্দার আলী বলেন, হাতির জ্বালায় আমরা অতিষ্ঠ। চাঁদা না দিলে নানাভাবে আমাদের বিরক্ত করছে। তাই ভয়ে চাঁদা দিচ্ছি। দুই হাতিকে চাঁদা দিয়েছি।
ওই বাজারের মুদি দোকানি আফজাল হোসেন বলেন, সকালে কেবল দোকান খুলে বসেছি। ঠিক তখনই হাতি এসে দোকানের সামনে হাজির। টাকা নেই বলার পরও হাতি যাচ্ছিল না। শুঁড় দিয়ে আমার গায়ে পানি দিচ্ছিল। দোকানের মালামাল উল্টাপাল্টা করছিল। তাই বাধ্য হয়ে প্রথমে ২০ টাকা চাঁদা দিয়েছি। না মানায় পরে ৫০ টাকা দিয়েছি।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) দুপুর ১টার দিকে বাজারে কথা হয় পানের দোকানি লুৎফর রহমানের সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, করোনা তো আমারও কোমর ভেঙে দিছে। এ দোকান দিয়াই আমাদের সংসার চলে। কিন্তু হাতির জ্বালায় তো অতিষ্ঠ হয়ে উঠছি। দুই হাতিরে চাঁদা দিছি। চাঁদা দেব তাতেও দুঃখ নাই। কিন্তু এ হাতি যদি একবার ভুলে শুঁড় দিয়া দোকানোত ঠেলা মারে, তাইলে সব শ্যাষ হয়া যাইবে।
বালাবাড়ি বাজারের চাল ব্যবসায়ী আজমত হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে মুই দোকান খুলি এক টাকারও বিক্রি করতে পারি নাই। কিন্তুক হাতি এসে হাজির। চাঁদার জন্য ভয় দেখাইছে। জীবনের ভয়ে বাধ্য হইয়া ধার নিয়া ৫০ টাকা দিছি।
বিকনা গ্রামের মফিজুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে নতুন কলেজ রোড এলাকায় একটি হাতি পথ রোধ করে। ভয়ে আমার সন্তান চিৎকার শুরু করে। তড়িঘড়ি করে ২০ টাকা দিলে হাতি নেয় না। পরে ৪০ টাকা দিলে রাস্তা ছেড়ে দেয়।
আরেক হাতির মাহুত শাকিল হোসেন বলেন, আমরা তো চুরি করছি না। পিরোজপুর থেকে মহাসড়ক দিয়ে বরিশালের উদ্দেশে রওনা হয়েছি। হাটবাজার, রাস্তাঘাটে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মানুষকে হাতি দেখিয়ে খুশি করে হাতির খাবারের জন্য টাকা নিচ্ছি। এতে দোষের কী?
ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খলিলুর রহমান বলেন, হাতি দিয়ে চাঁদা আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। এ রকম ঘটনা আমাকে কেউ জানাননি। এখন জানলাম। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।