নতুন আইনে মামলা করবে ভোক্তা অধিদপ্তর
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বিভিন্ন অপরাধ প্রমাণিত হলে ব্যবসায়ীদের অর্থদণ্ডের মাধ্যমে জরিমানার আওতায় আনছে। তবে নতুন আইনে শুধু অর্থদণ্ড নয়, কঠোর শাস্তির জন্য প্রক্রিয়া চলছে।
অর্থাৎ অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান রোববার (২২ মে) কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) অফিস পরিদর্শন এবং মতবিনিময় সভায় এ কথা জানিয়েছেন।
সভায় ভোক্তা অধিকার ও ক্যাব এক সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার পুনরায় ব্যক্ত করেছে বলেও এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় ক্যাব।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের কাজের ধারা ও ক্ষেত্রে বাজার তদারকির কার্যক্রমে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এ বিষয়ে ক্যাবের সমর্থন পাওয়া জরুরি।
জাতীয় ভোক্তা অভিযোগ নিষ্পত্তি জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, নবীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণে অধিদপ্তরের রাতারাতি অনেক কিছু করা সম্ভব নয়। এর জন্য ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে হবে।
মতবিনিময় সভায় ক্যাবের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন ক্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম। মত বিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ভোক্তা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার এবং উপ-পরিচালক আফরোজা রহমান। ক্যাবের পক্ষ থেকে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের যুগ্ম-সম্পাদক ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরী, ক্যাবের কোষাধ্যক্ষ ড. মো. মুঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার, ভোক্তাকণ্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় ক্যাব এর ৪৪ বছরের অব্যাহত প্রচেষ্টা এবং সরকারের পক্ষে অধিদপ্তরের কাজের লক্ষ অভিন্ন। তাই এই ব্যাপারে পারস্পরিক সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য এই ধরনের মতবিনিময় অব্যাহত থাকবে।
এম সফিকুজ্জামান বলেন, ক্যাব এবং ভোক্তা অধিকার একে অন্যের সম্পূরক। আমরা তো কাজ করছি, আমাদের সঙ্গে ক্যাব একসাথে কাজ করলে গতি আরও বাড়বে। দেশের ১৮ কোটি মানুষের কাছে আমরা সহজে পৌঁছাতে পারবো না। কিন্তু ক্যাব ১৮ কোটি ভোক্তার কণ্ঠস্বর তুলে ধরেন। ক্যাবের মাধ্যমে আমরা ভোক্তার তথ্য সরাসরি পেয়ে থাকি। আমরা এক সঙ্গে কাজ করছি আগামীতেও করবো।
তিনি বলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ২০০৯ সালের চলমান আইনের পরিবর্তন করে নতুন আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া চলছে। নতুন আইনে ই-কমার্স এবং শাস্তির বিধান দ্বিগুণ করা হচ্ছে।
এম সফিকুজ্জামান বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে ভোক্তা অধিদপ্তর। বিভিন্ন অপরাধ প্রমাণিত হলে ব্যবসায়ীদের অর্থদণ্ডের মাধ্যমে জরিমানার আওতায় আনা হচ্ছে। তবে নতুন আইনে শুধু অর্থদণ্ড নয়, কঠোর শাস্তির জন্য প্রক্রিয়া চলছে। অর্থাৎ অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন বাজারে যেসব ব্যবসায়ী সংগঠন আছে, সেই সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। আমাদের সঙ্গে কথা বলার সময় তারা যা বলে পরবর্তীতে তারাই সেগুলো মানে না। নিজেরাই নিজেদের করা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে। আমরা অভিযানে অনেক ব্যবসায়ী নেতাদের প্রতিষ্ঠানেও অনিয়ম পেয়েছি। এবং তাকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।
মহাপরিচালক বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান অনেক ব্যবসায়ী মেনে নিতে পারছে না। তারা এই অভিযানের বিরোধিতা করছে। অনেকেই এই অভিযানকে বেআইনি বলছেন। কিন্তু ভোক্তা অধিকারের অভিযান বেআইনি নয়। আইন মেনেই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ভোক্তার অধিকার যেখানেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেখানেই কাজ করবে ভোক্তা অধিদপ্তর।
সার্ভিস সেক্টরে অভিযানে বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকেই মনে করেন আমরা শুধু বাজারে বা দোকানে অভিযান চালাই। আসলে তা ঠিক নয়, আমরা সার্ভিস সেক্টরেও অভিযান শুরু করবো। এই সেক্টরে ভোক্তারা আরও বেশি প্রতারিত হচ্ছে। বড় ধরনের অনিয়ম চলছে। এ বিষয়ে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোক্তা অধিদপ্তরকে আরও দায়িত্ব দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরে কিছু পরিবর্তন আনতে চাই। আরও ডিজিটাল করতে চাই। ভোক্তা যাতে সহজেই অনলাইনের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে এবং সেবা নিতে পারে।