প্রধানমন্ত্রীর কাছে গোপালগঞ্জ জেলার গোবরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের খোলা চিঠি

 প্রকাশ: ১৩ মে ২০২২, ০৬:৫২ অপরাহ্ন   |   সম্পাদকের কথা


সফিকুর রহমান চৌধুরী , ডাকনাম টুটুল। একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তিনি  গোপালগঞ্জ জেলার গোবরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।  সফিকুর রহমান চৌধুরী  প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি  খোলা চিঠি লিখেছেন। দৈনিক অর্থনীিতর কাগজ এর পাঠকদের জন্য চিবিট হুবহু তুলে ধরা হলো।  


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা
আমার আন্তরিক সালাম গ্রহন করবেন। আশা করি আল্লাহর রহমতে শান্তিতে  আছেন। তবে অনুমান করতে পারি স্বস্তিতে নাই। পেঁয়াজ-বেগুনের ইনিংস শেষ হওয়ার পরে ক্রিজে এখন তেল নেমেছে। আউট করাই যাচ্ছে না। দুর্দান্ত পেস এ্যাটাক, কুশলী অফ স্পিন, দুরন্ত লেগব্রেক থেকে অকেশনাল বোলার সবাইকে দিয়েই চেষ্টা করছেন কিন্তু ক্রিজে এমনভাবে গেড়ে বসেছে মনে হচ্ছে ব্রায়ান লারার ৫০০ রানের স্কোর টপকে যাবে তেল।  এই মুহুর্তে অধিনায়ক হিসেবে আপনাকে ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। মাঠের বিভিন্ন দর্শকেরাও  আপনাকে স্লেজিং করবে কিন্তু আপনি জানেন কিভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়। জয় আপনার দলেরই হবে ইনশাআল্লাহ। শুধু কিছু খেলোয়াড়ের দিকে নজর রাখুন তারা যেন কোন ফিক্সিংএ না জড়ায়।
মাননীয় নেত্রী 
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে সারা বিশ্বেই মূল্যস্ফিতির উর্ধ্বগতি লাগামহীন বেড়ে চলেছে। দেশে বর্তমানে ডলারের উপর চাপ বেড়েছে। তার মানে ডলার জমা-খরচের হিসেবে ঋণাত্বক অবস্থা চলছে। অর্থাৎ আমদানি ব্যয় বেড়েছে। রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স কমেছে। পত্রিকান্তরে দেখলাম ১০% এর মত ডেফিসিয়েন্সি রয়েছে এইখাতে। এটা হতেই পারে। কিছুদিনের মধ্যে আবার ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের রিজার্ভ এখন ৪২ বিলিয়ন ডলার। সুতরাং  চিন্তার কিছু নেই। শুধুমাত্র বিলাসদ্রব্য এবং অপ্রয়োজনীয় বা অনুৎপাদনশীল পন্য আমদানি সীমিত বা কোন কোন ক্ষেত্রে আপাতত বন্ধ রাখুন। রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজ এবং বহুমূখী করুন। শুধুমাত্র গার্মেন্টস সেক্টর নয় নতুন নতুন রপ্তানিযোগ্য খাত বের করুন। সরকারি ব্যয় সংকোচন করুন।আপনার অর্থ-বানিজ্য-পরিকল্পনা-কৃষি-যোগাযোগ-স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নতুন রক্ত সঞ্চালন দরকার। 
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী 
একজন সাধারণ ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে আমাকে মাফ করবেন ভারী ভারী কথা বলে ফেলার জন্য।  আমি প্রতিবছর কৃষকদের জন্য আপনার কৃষি এবং পাট মন্ত্রনালয় থেকে বীজ-সার পেয়ে থাকি। এটা খুবই চমৎকার একটা সিদ্ধান্ত। আপনার আন্তরিকতা আর বহুমুখী চিন্তার ক্ষমতা আমার মত সারাবিশ্বের অধিকাংশ মানুষকে বিমোহিত করে। কিন্তু আপনার চিন্তার যে ফসল কৃষক তথা দেশের উপকারে আসার কথা তার ৪০ ভাগও আসেনা। কারন-
  ১)   প্রতি বৎসর মন্ত্রণালয়ের লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে কৃষকদের কাছে বীজ-সার আসে মৌসুমের মাঝ বরাবর অথবা পরে। অধিকাংশ কৃষক ততদিনে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় বীজ সংগ্রহ করে নেন। এতে আপনার এত সুন্দর একটা পরিকল্পনার ফসল ৫০- ৬০ ভাগের মত অপচয়।
আরেকটা কথা বলি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার মনে হয় এখন আর পাট এবং কৃষি আলাদা দুইটা মন্ত্রণালয়ের দরকার নেই। পাটকে কৃষি মন্ত্রনালয়ের অধীন করে দিন। তাতে আপনার অনেক ব্যয় সংকোচন হবে। তাছাড়া দুই মন্ত্রণালয়ের বীজ বছরে দুই সময়ে আসে। এবার অর্থাৎ ২০২১-২০২২ অর্থবছরে অনেক ইউনিয়নে ৪০-৫০% এর মত পাটবীজ নস্ট হয়েছে শুধুমাত্র নির্ধারিত সময়ে বীজ না পাওয়ার কারনে। এছাড়া চাহিদার তুলনায় ফসলি বীজও অনেকটা অপ্রতুল মনে হয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী 
দেশের সাধারণ মানুষ  বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বোঝেনা, মূল্যস্ফিতি বোঝেনা, লেনদেনের ভারসাম্য বোঝেনা, জিডিপি-জিএনপি বোঝেনা। তারা শুধু বোঝে চাল-ডাল-তেল-লবন সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য তাদের নাগালের মধ্যে আছে কিনা। তারা দু'বেলা দু'মুঠো ভাত খেতে পারছে কিনা। আমি জানি আপনি প্রানান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এবং এটা অনস্বীকার্য যে বাংলাদেশ এখন হাটি হাটি পা পা করে নয় বরং রীতিমতো অন্যদের সাথে পাল্লা দিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। আপনার অর্জন অনেক। কিন্তু একথাও সত্য যে আপনার আমলে অনেক লুঙ্গিপরা লোক শুধুমাত্র আপনার দলের পরিচয় বিক্রি করে টাকার পাহাড়ে লুঙ্গিড্যান্স করছে। আর সাধারণ মানুষ তাদের দেখতে দেখতে চরম প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠছে। আমার মত মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো যখন মাসের বাজেট মেলাতে পারছেনা; বাজারে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত পন্য কিনতে পারছেনা তখন আপনাকে গালি দিয়ে মুখ কালো করে বাড়ি ফিরছে। কাজেই যেভাবে পারেন দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরুন। টিসিবির মাধ্যমে প্যাকেজ পন্য নয়। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় প্রতিটি ইউনিয়নের খানা জরিপ করে ন্যুনতম ৪৫ থেকে ৫০ ভাগ পরিবারকে মাসিক রেশনের আওতায় নিয়ে আনুন। বাকী পরিবারগুলোর ৩০-৩৫ ভাগ পরিবারে অন্তত একজন করে লোক হয় চাকরি অথবা বিদেশে আছে অবশিষ্টাংশ উচ্চ-মধ্যবিত্ত অথবা ধনী। তাদের নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী 
জানি আমার এ লেখা আপনার গোচরে আসবেনা। আমার দুর্বল মস্তিষ্কের দুর্বল চিন্তা আর দুর্বল প্রস্তাবনা হয়তো গ্রহনযোগ্যও নয়। তবু একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আর আপনার দেওয়া মনোনয়নে আমি যেহেতু চেয়ারম্যান হয়েছি সেহেতু একদম তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের সাথে আমার গভীর যোগাযোগ রয়েছে।তাদের এলোমেলো ভাবনার গোছানো প্রকাশ আমার এই লেখা। যদি কোনভাবে বা আপনার কোন এজেন্সির মাধ্যমে আপনার দৃষ্টিগোচর হয় ; যদি একবার চিন্তার খোরাক যোগায় তাহলেই আমার এ লেখা সার্থক হবে।
মাননীয় নেত্রী 
আপনার জন্য গ্রামের একদম সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে সবাই আমরা দোয়া করছি। আপনি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। দেশের ভালো থাকার জন্য আপনার ভালোথাকা খুব জরুরি। আজ এখানেই শেষ করছি।
জয়বাংলা 
জয় বঙ্গবন্ধু।