সংবর্ধনার নামে কলেজ ফান্ড থেকে অস্বাভাবিক অর্থ খরচ এর অভিযোগ

পটুয়াখালীর দুমকি’র আজিজ আহম্মেদ ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা পরিষদে (অ্যাডহক কমিটি) প্রথমবারের জন্য সভাপতি মনোনীত হওয়ায় কলেজ মাঠে সম্প্রতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট হারুন-অর-রশীদকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই সংবর্ধনা প্রদান উপলক্ষে অনুষ্ঠানে লোকসমাগম বাড়াতে উপজেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, চরবয়েড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জয়গুননেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সাবেরা আজিজ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মুরাদিয়া বশিরিয়া ফাজিল মাদরাসার শিক্ষক, কর্মচারী ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠদান বন্ধ রেখে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের রাস্তায় রোদের মধ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড় করিয়ে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ্যবোধ করে বলে জানা যায়।
উক্ত সংবর্ধনা উপলক্ষে উপজেলা চেয়ারম্যানকে অভিনন্দন জানাতে উপজেলা শহর থেকে কলেজ পর্যন্ত ৭টি তোরণ, ব্যান্ড পার্টির ঢাক-ঢোল বাজনাসহ আড়াই হাজার লোকের ভূড়ি ভোজের আয়োজন করা হয়। কলেজের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ এবং বিধি ভঙ্গ করে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড় করানোর কারণে প্রশাসন ও অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা আমন্ত্রিত থাকলেও তাঁরা কেউই অংশ নেননি। এমনকি সরকারি বিধি ভঙ্গ করে শিক্ষার্থীদের সড়কে দাঁড় করানোর অভিযোগে ইতিমধ্যে ৭ প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিকট কারণ দর্শানোর জবাব চাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গিয়ে কলেজ ও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত কল্যাণের দিক বিবেচনা করে গঠিত তহবিলের প্রায় ৪ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয় বলে অভিযোগ ওঠেছে। উপজেলা চেয়ারম্যানের এহেন কান্ডজ্ঞানহীন কর্মকান্ডে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকার লোকজনের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। কলেজ ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণের দিক বিবেচনা করে গঠিত তহবিলের টাকা এভাবে তছরুপ করা ঠিক হয়নি বলে মনে করছেন স্থানীয় জনসাধারণ। পূর্বেও তারা অনেক কমিটি কিংবা সভাপতি দেখেছেন কিন্তু কেউই এমনটি করেননি বলে তারা জানায়। সভাপতি নির্বাচিত হয়েই তিনি কল্যাণ তহবিলের এতগুলো টাকা এভাবে খরচ করে ফেলেছেন ভবিষ্যতে তিনি আরও নানাভাবে কল্যাণ তহবিলের টাকা তছরুপ যে করবেন না তাতে অভিভাবকরা সন্দেহ প্রকাশ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় বিগত মেয়াদে নির্বাচিত সাবেক সভাপতি আবদুল মান্নান ছিলেন কলেজটির প্রতিষ্ঠাকারী আজিজ আহমেদ এর ভাতিজা। আজিজ আহমেদ মারা যাওয়ার পর তাঁরাই কলেজটিকে পরিচালনা করে আসছিল। সাবেক সভাপতি আবদুল মান্নান জনতা ব্যাংকের সাবেক জিএম (বরিশাল অঞ্চল)। শিক্ষানুরাগী হিসেবে তাঁর ব্যাপক সুনাম রয়েছে। তিনি দায়িত্বে থাকাকালে কলেজটিতে ব্যাপক উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। কল্যাণ তহবিলের টাকা অযথা কোথাও খরচ করেছেন বলে অদ্যাবধি তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজটির একাধিক শিক্ষক জানান, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে সভাপতিকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান করার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও একরকম চাপে পড়েই করতে বাধ্য হয় তারা। অথচ জনপ্রতিনিধিদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও শিশুদের রাস্তায় দাঁড় করানো যাবে না বলে নির্দেশনা রয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের।
এদিকে অনুষ্ঠানে লোকসমাগম বৃদ্ধির জন্য অন্তত পাঁচ দিন আগে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান নিজে কথা বলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী আর কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট হারুন-অর-রশীদের এহেন অনৈতিক, অকল্যাণমূলক ও বিধিবহির্ভূত কর্মকান্ডে প্রচন্ড ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী। তারা কলেজটিতে সভাপতি হিসেবে এমন লোককে দেখতে চায় যিনি হবেন কলেজের সার্বিক কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ। স্বনামধন্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণকর ভবিষ্যত নষ্টের পায়তাঁরা করছে একটি বিশেষ মহল। এখনই যদি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়া হয় তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যত হুমকির মুখে পড়বে।