সাংবিধানিক দুর্নীতি ও অপরাধ দমন কমিশন
মুঃ আবদুল হাকিম
দুর্নীতি ও অপরাধ মানুষের এত ক্ষতি করে যে এগুলো দমন করার জন্য মানুষ সমাজ এবং রাষ্ট্র নামক দুটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিয়েছে।সমাজ ও রাষ্ট্র দুর্নীতি এবং অপরাধকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে নলেজ রাজনীতির পরিবর্তে গ্যাং রাজনীতির বিকাশ ঘটবে। বিশ্বব্যাপী সামাজিক বিজ্ঞান এ নিয়ে হরদম কাজ করে যাচ্ছে। এগুলো দমন কোনো সহজ বিষয় নয়।মসজিদে মসজিদে জলসা, জলসায় ওয়াজ নসিহত করে এবং জিরো টোলারেন্স ঘোষণা করেও এর গতিরোধ করা যাচ্ছেনা। অপরাধের এজাহার হয় থানায় এবং দুর্নীতির অভিযোগ হয় দুর্নীতি দমন কমিশনে।দুর্নীতি নিজেও একটি অপরাধ। খুব সম্ভব দুর্নীতিকে আলাদা একটি মর্যাদা এবং আভিজাত্য দেয়ার জন্য আলাদা দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা হয়েছে। তাছাড়া দুর্নীতির অনুসন্ধান এবং তদন্ত প্রক্রিয়া ও খুব জটিল।প্রত্যেক উপজেলায় কমিশনের একটি অফিস থাকতে পারে যেখানে সকল এজাহার দায়ের হবে। বিসিএস(প্রসিকিউশান) নামে একটি নতুন এবং অন্যান্য জেনারেল ক্যাডার অফিসারদের দেশ বিদেশে প্রচুর প্রশিক্ষণ দিয়ে এ কমিশন তৈরী করা যেতে পারে। এরা তদন্ত অফিসার এবং কোর্ট অফিসার হিসেবে কাজ করতেপারে।থানায় শুধু জিডি রেকর্ড করা যেতে পারে। থানায় এজাহার দায়ের করার পুরোনো প্রথা বাতিল করা যেতে পারে। উচ্চ শিক্ষিত তদন্ত পুলিশকে কমিশনে ন্যস্ত করা যেতে পারে।থানার পুলিশকে শুধু আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে সীমাবদ্ধ রাখা যেতে পারে। দুর্নীতি ও অপরাধের আশ্রয় নিয়ে সমাজে গড়ে ওঠে ১০% প্রভাবশালী মানুষ যারা সমাজের বাকি ৯০% সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষদের ছলে বলে কলে কৌশলেশোষণ ও দমন করে।অনেকে ১০% প্রভাবশালীর দুর্নীতিকে হাল্কা ভাবে দেখে এবং ৯০% গরীব ও বঞ্চিত মানুষের দুর্নীতি হন্য হয়ে খুঁজতে ব্যস্ত।সগীরা অপরাধে সমাজের তেমন একটা ক্ষতি হয়না। কবীরা অপরাধে পরিপূর্ণ ফোকাস দেয়ার জন্য সগীরা অপরাধকে উপেক্ষা করা কবীরা অপরাধদমনের একটি যথার্থ বা মোক্ষম রণ কৌশল। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহল সবসময় সরকারকে সগীরা অপরাধ দমনে ব্যস্ত রাখে যাতে তাদের অপকর্মের দিকে সমাজের চোখ না পড়ে। বাঙালির পরনিন্দা পরায়ণ বা ছিদ্রান্বেষী স্বভাবকে তারা এক্ষেত্রে কাজে লাগায়। বাজার থেকে স্বল্পমূল্যে একদল জ্ঞানপাপী সংগ্রহ করা তাদের জন্য কঠিন কোনো কাজ নয়। প্রকৃতিগতভাবেই মানুষ নিষ্পাপ নয়।কাজেই মানুষকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখাই শ্রেয়।মানুষকে ফেরেস্তা বানানোর প্রকল্প হাতে নিয়ে ইবলিশ নিধন একটি অবাস্তব ধারণা। মজার ব্যাপার হল অনেক মানুষের পকেট থেকে অল্প কিছু মানুষের পকেটে টাকা যায় কিভাবে ?এটা কিভাবে সম্ভব হয় ? কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞাণীগুণীরাও এটা ঠেকাতে পারে না। কারণ এগুলো নিয়ে গবেষণা করাতো দূরের কথা ভাবতেও অনেকের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।এগুলো নিয়ে লেখালেখি করলেও কেঊ পড়েনা। কারণ আগের মত সদিচ্ছা প্রণোদিত নাগরিক আমরা স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আর তৈরি করতে পারছিনা। অবস্থার দ্রুত এত অবনতি ঘটছে যে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের এ নিয়ে কষ্ট করে লেখালেখি করার আগ্রহটাও হয়তো একদিন আর থাকবে না।
অনেকে মনে করে সমাজ থেকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাস দমন কোনোদিন সম্ভব নয়। কে কাকে দমন করবে? দুর্নীতি পরায়ণ ব্যক্তি কেনো কোন দুঃখে দুর্নীতি দমন করতে যাবে ? অপরাধী কেনো কোন দুঃখে অপরাধ দমন করতে যাবে ? ধনীদের সমাজ কোনোদিন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। বরং ধনীরা আদিকাল থেকে সমাজ নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। অথচ চুয়াত্তর বছর ধরে দেশে কোনো ধনী শুমারি নেই। দুর্নীতি এবং অপরাধের বীজ লুকিয়ে থাকে সমাজের ক্ষমতা কাঠামো এবং আইন ও নীতি কাঠামোর মধ্যে। আমাদের দৃষ্টিভংগি এবং কথা ও চিন্তার মধ্যে দুর্নীতি লুকিয়ে থাকে। সরকারী পলিসির কারণে ধনী এবং গরীব একসাথে তৈরী হয়।আবার দারিদ্র্য বিমোচনের প্রকল্প হাতে নিয়ে জনদরদী হবার সুযোগটাও সরকার হাত ছাড়া করতে চায় না। দুর্নীতি এবং অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ যাতে উত্তরাধিকারীগণ বংশ পরম্পরায় ভোগ করতে না পারে সেজন্য দুর্নীতি পরায়ণ ব্যক্তি বা অপরাধী মারা গেলেও তার মরণোত্তর বিচারের বিধান আইনে থাকতে হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে অর্জিত সম্পদ সরকারে বাজেয়াপ্ত করার বিধান থাকতে হবে। তাহলে অপরাধীর পরিবার বর্গ অপরাধীকে অপরাধ করতে বাধা দিবে বলে আশা করা যায়। শুধু শুধু লিপ বা পেন সার্ভিস দিয়ে এগুলো দূর হবেনা। দরকার সমাজের ক্ষমতা কাঠামো এবং আইন ও নীতিকাঠামোর যুৎসই পরিবর্তন যা আবার নিরন্তর বুদ্ধিবৃত্তিক সাধণা ব্যতীত কোনোমতেই সম্ভব নয়।
মুক্ত ও স্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান,গবেষণা ও বিশ্লেষণ ছাড়া এগুলো দূর করা অসম্ভব ব্যাপার। দুর্নীতি এবং অপরাধ নির্মূলের দায়িত্ব সরকারের । ধনতন্ত্রের সাথে আপোষ করার কারণে পৃথিবীর কোনো দেশের সরকার এগুলো পুরোপুরি দূর করতে চায় না। দূর করতে চায় বলে ভান করে। আসলে দূর করতে চায় না। জনগণকে অন্ধকারে রাখে এবং মিডিয়াকে দিয়ে জনগণের আই এবং ব্রেন ওয়াশকরে ।এটা রোধ করতে হলে রাজনীতিকদের পকেট থেকে মিডিয়াকে বের করে একটি সাংবিধানিক কমিশনের আওতায় আনতে হবে। বহুকেন্দ্রিক ক্ষমতা কাঠামো এবং অর্থনীতির সুষম বন্টন ছাড়া দুর্নীতি এবং অপরাধের লাগাম টানা যাবে না। অবাধ ক্ষমতা এবং অর্থলাভের সুযোগ বহাল রেখে সমাজ থেকে দুর্নীতি এবং অপরাধ কোনো দিন দূর করা সম্ভব হবেনা।এগুলো দূর করতে হলে জ্ঞানের কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে। আইন দ্বারা অসীম ধনতন্ত্রের পরিবর্তে সীমিত ধনতন্ত্রচালু করতে হবে। সমাজ বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্রকে বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্র থেকে আলাদা করতে হবে। সরকারের আকার ও আয়তন ছোট করতে হবে।ব্যবসা ও বিনিয়োগকে সহজ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। সমাজ বিজ্ঞানীদের ক্ষমতায়ন করতে হবে।অর্জিত জ্ঞান রাষ্ট্র সংস্কারে কাজে লাগাতে হলে সামাজিক বিজ্ঞান এবং ব্যবসা অনুষদের ছাত্রদের মধ্য থেকে বিসিএস জেনারেল ক্যাডার নিয়োগ করা যেতে পারে । তাদের ক্যারিয়ার পাথ টেকনিক্যাল ক্যাডার থেকে অবশ্যই আলাদা করতে হবে।অর্জিত জ্ঞানের যথাযথ প্রয়োগের নিমিত্তে টেকনিক্যাল ক্যাডারের জন্যও আলাদা নিয়োগ ও পদোন্নতি সংস্থা এবং ক্যারিয়ার পাথ থাকতে হবে।ঔপনিবেশিক বলে দিনরাত প্রশাসনকে গালিগালাজ করলেও আমরা ৭৪ বছর থেকে প্রশাসনিক সংস্কারের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছি না। রাজনীতি থেকে প্রশাসন এবং বিচার বিভাগ আলাদা করতে হবে। নতুন রাজনীতির দর্শন খুঁজে বের করতে হবে। সমাজ বিজ্ঞান চর্চার নতুন নতুন দিগন্ত খুঁজে বের করতে হবে। সরকারের সুবিধা বন্টনের ক্ষমতা কমাতে হবে। রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তৃত্ব দলের হাতে তুলে দিলে ক্ষমতার ভারসাম্য বিপর্য্যস্ত হবে। জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে। দলীয় রাজনীতির শৃংখলার দায়িত্ব কমিশন অথবা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের হাতে দিতে হবে। ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ শুধু দলীয় সরকারের হাতে না রেখে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত নির্দলীয় রাষ্ট্রপতির হাতে রাখা যেতে পারে। একইভাবে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে কোনো নিয়োগ ও পদোন্নতিদলীয় সরকারের হাতে রাখা সমীচীন নয় ।বিচার ব্যবস্থার কিছু মৌলিক পরিবর্তন ঘটাতে হবে। জুরিবোর্ড পূনঃপ্রবর্তন করা যেতে পারে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নাগরিকদের দ্রুত বিচার পাওয়ার অধিকার সংবিধানে লিখতে হবে।সমাজ বিজ্ঞানীদের জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। গবেষণা বাড়াতে হবে। সমাজের দ্রুত ভয়ানক পরিবর্তন ঘটছে। সমাজের আরো অধঃপতন রোধ করতে সমাজ বিজ্ঞানীদের সক্রিয়এবং সরব হতে হবে। জনগণকে জাগতে হবে এবং জাগাতে হবে। সমাজের ঘুম ভাংগাতে পারে একমাত্র সমাজ বিজ্ঞানের তৎপরতা । প্রোএক্টিভ মানুষ সমাজ বদলায়। রিএক্টিভ মানুষ নিজেও মরে এবং সমাজকেও বিপর্য্যস্ত করে।সংবিধানে ষোলটির মত সাংবিধানিক সংস্থা গঠন করা যেতে পারে যারা সরাসরি সংসদ, সাংবাদিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিক্ষকদের কাছে জবাবদিহিতা করবে। কমিশনের চেয়ারম্যান অথবা সদস্য নিয়োগের জন্য একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়া থাকতে হবে যাতে দলীয় সরকারের দৃশ্যমান অথবা অদৃশ্য কোনো হাত থাকবে না। প্রত্যেক কমিশনে তিন থেকে নয় জন ব্যক্তি থাকতে পারে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্বের জন্য নিম্নলিখিত পেশাজীবী কাউন্সিল গুলো থাকতে পারে ;
সর্বদলীয় রাজনৈতিক কাউন্সিল
সর্বধর্মীয় কাউন্সিল
সিভিল সার্ভিস কাউন্সিল
জুডিশিয়াল কাউন্সিল
মিলিটারি সার্ভিস কাউন্সিল
বার কাউন্সিল
প্রেস কাউন্সিল
টিচার্স কাউন্সিল
বিজিনেস কাউন্সিল
লেবার কাউন্সিল
ফারমার্স কাউন্সিল
স্টুডেণ্টস কাউন্সিল
ছাত্ররা ছাত্রত্ব থাকা কালে এবং অন্যান্য পেশাজীবীরা আমৃত্যু এসব কাউন্সিলের কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে। একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ একবার সাংবিধানিক পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবে। সর্বক্ষেত্রে ইকুয়াল অপুরটুনিটি ল অনুসরণ করতে হবে। যতই যোগ্য লোক হোক না কেনোকাউকে বার বার পদোন্নতির দিয়ে অন্য লোকদের পদোন্নতি বঞ্চিত করা সমীচীন নয় । অন্যকেও নিয়োগের সুযোগ করে দিতে হবে। সাংবিধানিক পদে এভাবে নিয়োগ করলে পক্ষপাতিত্বের আশংকা শূন্যের কৌঠায় নেমে আসতে পারে। এভাবে নিয়োগকরলে এইসব প্রতিষ্ঠানে দলীয়করণের আর কোনো সুযোগ থাকবে না । দলের হাতে নিয়োগ বাণিজ্য না থাকলে দলবাজি, চাটুকারিতা, চামচাগিরি, দলীয়করণ ইত্যাদি কমে যেতে বাধ্য। ধীরে ধীরে দলীয় করণের থাবা থেকে জাতি মুক্ত হবে। নিরপেক্ষ থাকাটা একটি নাগরিক সৌন্দর্য্য হিসেবে বিবেচিত হবে। জনগণের মধ্যে দলবাজি করার প্রবণতা কমে যাবে। এ কমিশন গুলো নিরপেক্ষ সরকার হিসেবে সংবিধানে বিল্ট ইন থাকবে। আলাদা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন আর প্রয়োজন হবে না। পেশাজীবীরা পেশাজীবীত্ব নিয়ে কাজ করবে। দলকানা হবে না। বাজারে আমরা যে দলকানা দেখি তারা সত্যিকার দলকানা নয় - মতলবী দলকানা। ধান্দার জন্য দলকানা সাজে। বাঙালি জাতির মধ্যে অনেক সুবিধাবাদী আছে যারা সব সময় ধান্দায় থাকে। ভোল পাল্টাতে বিশ্বে তাদের জুড়ি নেই। দলকানা গিরিকে একটা ঘৃণ্য স্বভাব হিসেবে গণ্য করতে হবে। সরকার হবে দলীয় এবং নির্দলীয় ব্যক্তিদের একটি সুষম মিশ্রণ। নিরপেক্ষ পেশাজীবীত্ব সমাজে ভারসাম্য নিয়ে আসবে। ছাত্র এবং প্রধান প্রধান পেশাজীবীরা সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলের মাধ্যমে সরকারের নির্দলীয় অংশ হিসেবে ভূমিকা পালন করবে। দলে সন্ত্রাস এবং দুর্নীতি করে কেউ যেন পার না পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। এক ঘাটে পার পেলেও আরেক ঘাটে যাতে ধরা পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ।দুর্নীতি ও সন্ত্রাস ধরবার জন্য নাগরিক সমাজ সর্বত্র ওঁৎ পেতে থাকবে। দল জনগণকে গোলাম বা ক্রীতদাস বানিয়ে রাখার বা বলির পাঁঠা হিসেবে ব্যবহার করার কোনো আইনগত সুযোগ আর পাবে না। দলীয় নেতাদের আচরণ বিধি থাকবে। রাজনৈতিক কমিশন সেটা দেখভাল করবে।গ্যাং রাজনীতিকে নলেজ রাজনীতি দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে। ভাল মানুষেরা রাজনীতি করবে। খারাপ মানুষেরা রাজনীতি বাদ দিয়ে অন্য কাজ করবে। সমাজে কোনো অপশক্তি যা খুশি তা আর করতে পারবে না। সমাজ জ্ঞানী গুণী মেধাবীদের নিয়ন্ত্রণে শৃংখলার সাথে এগিয়ে যাবে। সমাজে সাংবিধানিক আদালত মেরিট কোর্ট হিসেবে কাজ করতে পারে। যোগ্য ব্যক্তি যেনো নিয়োগ এবং পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত না হয় সেটা মেরিট কোর্ট দেখভাল করবে। বঞ্চিত ব্যক্তি যেনো তাৎক্ষণিকভাবে আইনের আশ্রয় নিতে পারেএবং আইনের আশ্রয় নিলে আদালত যেনো দ্রুত তার প্রতিকারের ব্যবস্থা করে তা নিশ্চিত করতে হবে। রায়ের সাথে সময়ের একটা সম্পর্ক থাকা উচিৎ। দ্রুত রায় পাওয়া নাগরিক অধিকার। বছরের পর বছর আদালতে রায় ঝুলে থাকতে পারে না। ফালতু মামলার ভারে আদালত যেনো ডুবে না যায় তার জন্য দ্বন্দ্বনিরসনের শক্তিশালী বিকল্প ব্যবস্থা থাকতে হবে। আদালতে যে কোন মূল্যে মামলার সংখ্যা কমাতে হবে। তাহলে বিচারক মণ্ডলী যত্ন করে মামলা নিষ্পত্তি করতে পারবে।
থানা ও আদালতে দুর্নীতি জিরো করতে হবে। কিভাবে ? দ্রুত তদন্ত এবং দ্রুত রায় দেয়ার মাধ্যমে। সাংবিধানিক বা নাগরিক আদালতকে রিট মামলা আমলে নেয়ার ক্ষমতা অর্পণের মাধ্যমে। নাগরিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে। বিভিন্ন নাগরিক ফোরাম, নাগরিক কমিটি, নাগরিক সমিতি ইত্যাদি সংগঠনের মাধ্যমে। বৃদ্ধ মানুষদের শান্তিপূর্ণ মিছিলের মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবীণ নাগরিকদের সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে। বাংলাদেশের এক নম্বর প্রবলেম সন্ত্রাস মোকাবিলা। দুই নম্বর প্রবলেম দুর্নীতি মোকাবিলা। সর্বদলীয় কাউন্সিল,পুলিশ, প্রশাসন, বিচার বিভাগ ইত্যাদি সকল প্রতিষ্ঠানকে এ অভিযানে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে। সমাজবিজ্ঞান চর্চা এবং অনুশীলনের জন্য আলাদা ক্যাম্পাস স্থাপনের মাধ্যমে যেখানে নাগরিক অধিকার , গণতন্ত্র ,সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সংবিধান নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চলমান থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশুদ্ধ রাজনীতি চর্চার কেন্দ্র বা মুক্ত চিন্তার কেন্দ্র বানাতে হবে। দর্শন কেন্দ্র বানাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় হবে সকল প্রকার গণমুক্তি চেতনার থিংক ট্যাংক। এখানকার ছাত্র শিক্ষকবৃন্দ সারাদেশে গণসংযোগ অব্যাহত রাখবে। অবশ্যই নির্দলীয় ব্যানারে। জনগণই হবে নির্দলীয় এবং তত্ত্বাবধায়ক শক্তি বা নিরপেক্ষ শক্তি। তাহলে নিরপেক্ষতার জন্য জনগণকে আর এত হাহাকার করতে হবে না। দেশে নির্দলীয় এবং নিরপেক্ষ শক্তি দুর্বল হলে ফ্যাসিবাদ এবং জংগিবাদ চাংগা হয়ে ওঠতে পারে। জংগিবাদ এবং ফ্যাসিবাদ একটি দেশের জন্য ক্যান্সার।এই ক্যান্সার মোকাবিলায় নির্দলীয় এবং নিরপেক্ষ শক্তির বিকল্প নেই।এটি ঘটতে পারে কেবলমাত্র সমাজবিজ্ঞান চর্চার জন্য পৃথক ক্যাম্পাস স্থাপনের মাধ্যমে।অন্য কোনোভাবে যা সম্ভব নয়। এটাই জ্ঞানমার্গ।