প্রতিশ্রুতি রক্ষার সঙ্গে সিস্টেম বদলানোর চ্যালেঞ্জ
সংবাদ সম্মেলন কক্ষের জন্য দৃশ্যটা খুব অপরিচিত কিছু নয়। শত শত সাংবাদিকের পদচারণায় জায়গাটা মুখরিত হয় প্রায়ই।
কিন্তু বদলে গেছে কেবল মঞ্চের ছবিটা। খুব বেশি অপরিচিত মুখ অবশ্য নেই। তবে আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকা দুজনই আলাদা। ফারুক আহমেদের বাঁ পাশের চেয়ারে বসে ছিলেন নাজমূল আবেদীন ফাহিম।
দুজনকেই বুধবারের বোর্ডসভায় পরিচালক করা হয়েছে। এরপর ফারুক আহমেদ পেয়েছেন এক যুগ ধরে আঁকড়ে রাখা নাজমুল হাসান পাপনের সভাপতির চেয়ার। সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে প্রথমবার করা সংবাদ সম্মেলনে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুঁড়ি ছিল স্বাভাবিকভাবেই, তবে ফারুক নিয়েছেন করে দেখানোর চ্যালেঞ্জও।
তার শুরুটা ছিল এমন, ‘আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশের মতো একটা সম্ভাবনাময় দেশে; আমাদের যতটুকু করার দরকার ছিল ততটুকু করতে পারিনি। এটা বলার শেষে যেটা বলতে চাচ্ছি আমি, আমাদের সাফল্য একদম কম নয়। হয়তো কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় আরও উন্নতি করার কথা ছিল যেগুলো করতে পারিনি। ’
এরপর বলেছেন নিজের দায়িত্বের কথাও, ‘এখন আমাদের দায়িত্ব হবে এই সিস্টেমটাকে পুনর্গঠন করার। অনেক সময় অনেক কাজ করা যায় না, অনেক ধরনের বাইরের চাপ থাকে। আশা করব, এবার আমি সভাপতি থাকা অবস্থায় যতটুকু সম্ভব সুন্দর সিস্টেম দাঁড় করাতে চাই। ’
‘এটা পুরোনো কথা, একটা সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমি পদত্যাগ করেছিলাম। আমার সবচেয়ে বেশি প্রায়োরিটি থাকবে, যে সিস্টেমটা আমি তৈরি করতে চাই। ’
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের জন্য এক মিনিটের নীরবতা পালন করার অনুরোধ করেন ফারুক। এই আন্দোলনই দেশের মতো বদলে দিয়েছে বিসিবির দৃশ্যপট।
১৫ বছরের বেশি সময় সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকার পর দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গা ঢাকা দিয়ে আছেন বিসিবির প্রভাবশালী কর্মকর্তারাও। সময় অনুযায়ী নির্বাচন হলেও বিসিবিতে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না কেউ। বিভিন্ন জায়গায় বোর্ডের প্রভাব খাটিয়ে তারা হয়ে ওঠেন অপ্রতিরোধ্য। গঠনতন্ত্র মেনেই এসব করেছেন তারা, ফারুক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেটিতে হাত দেওয়ারও।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আলোকপাত করতে হবে, আমরা যে গঠনতন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচিত হই এবং ইভেনচুয়ালি সভাপতি হই। এই গঠনতন্ত্রের ব্যাপারে আমাদের চিন্তা করতে হবে, কী করলে ভালো হয়। সামনের বছর আরেকটা নির্বাচন আছে, সম্ভবত তার আগে গঠনতন্ত্রে একটু হাত দিতে হবে। সত্যি সত্যি যারা ক্রিকেটকে ভালোবাসে, ক্রিকেটের জন্য কিছু করতে চায়, তাদের আসলে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। ’
‘আমি জানি, এই দেশ ১৮ কোটি মানুষের। আমাদের দেশে আপনারা, আমরা, খেলোয়াড়রা, আমাদের দর্শক যারা আছেন, তারা এতটা ক্রিকেট পাগল; এখানে অনেক এলিমেন্ট ঢুকে যায়। আমাদের ক্রিকেট বোর্ড খুব বেশি গ্ল্যামারাস হয়ে যায়, যখন সবাই এটার অংশ হতে চায় আর কী। আমি অবশ্যই যাদের প্রয়োজন হবে, সঙ্গে নেব। কিন্তু এটার প্রথম মানদণ্ড হবে ক্রিকেটের উন্নতি। ’
আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় দুর্নীতিগুলো সামনে আসছে। এ অবস্থায় বিসিবিও খুব একটা ব্যতিক্রম হবে না, জানেন ফারুকও। এদিকেও চোখ থাকবে তার। বিসিবির পরিচালক হওয়া গর্বের কিছু হবে না, সেটিও নিশ্চিত করতে চান ফারুক।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে এমন দুর্নীতি হয়েছে যা আমরা সবাই জানি। আমরা তো সবাই বাংলাদেশেরই মানুষ। এক্ষেত্রেও প্রতিটি সংগঠনে যেমন দুর্নীতির কথা শুনেছি, ক্রিকেট বোর্ডও এটার বাইরে নয়। যদি এরকম কিছু থাকে, আমরা লক্ষ্য রাখব। আমরা দেখব জিনিসটা কী হয়েছে। ’
‘আগামীতে দুর্নীতি পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না। এটা কেউ যদি বলে, আমি তার কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করব না। কিন্তু একটা সিস্টেম চালু করতে হবে। যেখান থেকে আমরা এই জিনিসগুলো কমাতে পারব। একসময় দুর্নীতিমুক্ত একটা জায়গা পাব। ’
বাংলাদেশের ক্রিকেট বেশির ভাগ সময়ই চলে আসে মাঠের বাইরের আলোচনায়। বিসিবি সভাপতি হিসেবে প্রধান লক্ষ্য কী থাকবে ফারুকের? গ্রাউন্ডস তৈরি, ডেভলপমেন্ট প্রক্রিয়ার উন্নতি এসবের সঙ্গে নতুন বিসিবি সভাপতি বলছেন- সবার আগে রাখা হবে দেশ ও দলকে।
ফারুক বলেন, ‘সবার আগে আমি যদি চিন্তা করি, আমি বাংলাদেশি এবং পরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল; তাহলে কিন্তু অনেক সমস্যা থেকে বের হতে পারব। তখন এখানে কোনো ব্যক্তিগত পছন্দ থাকবে না। তখন কোনো ব্যক্তিগত এজেন্ডা থাকবে না। দেখবেন সব জায়গামতো হবে। তার মানে আমাদের দেশ এবং আমাদের দল সবার আগে। ’
‘আমি সবাইকে এই বার্তা পরিষ্কারভাবে দিতে চাই- আমি যদি দেশ ও দলের কথা চিন্তা করি, তখন কিন্তু অন্য জায়গাগুলো গৌণ হয়ে যাবে। এ পছন্দের, সে পছন্দের- এটা কমে যাবে। ’