রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন

 প্রকাশ: ২০ অগাস্ট ২০২১, ০৪:১৪ পূর্বাহ্ন   |   সোস্যাল মিডিয়া



১৯ আগস্ট ২০২১ তারিখে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রনে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প এর আওতায় বিআরটিএ/বাংলাদেশ পুলিশ/রাইড শেয়ারিং সাভিসের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর জনাব মোঃ আশরাফ উদ্দিন মহোদয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত মতবিনিময় সভায় অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক জনাব মোঃ হুমায়ুন কবীর (যুগ্ম সচিব)সহ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা), পরিচালক (মনিটরিং এন্ড এনফোর্সমেন্ট), পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা), পরিচালক (ঢাকা মহানগর), বিআরটিএ-এর প্রতিনিধি, ঢাকা মেট্রোপলিট্রন পুলিশ-এর তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক), গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক), রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান পাঠাও, উবার, সহজ, ওভাই, চালডাল.কম,  ------ এর প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
 
সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক জনাব মো হুমায়ুন কবীর (যুগ্ম সচিব)। তিনি বলেন, ২০১৭ সালের বিআরটিএ সড়কের যানজট হ্রাস, জনগণের মূল্যবান শ্রমঘন্টা ও জ্বালানী অপচয় হ্রাসসহ পরিবেশ রক্ষায় রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের মাধ্যমে ব্যক্তিগত মোটরযান (মোটরসাইকেল, মোটরকার, জীপ, মাইক্রোবাস ইত্যাদি) ব্যক্তি মালিক কর্তৃক ব্যবহারের পর অতিরিক্ত সময়ে ভাড়ার বিনিময়ে যাত্রী বহনের মাধ্যমে সড়কে মোটরযানের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস করার উদ্দেশ্যে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা প্রণয়ণ করে বিআরটিএ ১৪টি কো¤পানিকে অনুমোদন প্রদান করে। উক্ত নীতিমালায় বিদ্যমান মোটরযান আইন ও বিধিসহ রাইট শেয়ারিং মোটরযান চালককে ট্রাফিক আইন ও অন্যান্য বিধিবিধান মেনে চলার কথা বলা হলেও বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটছে। 
 
রাইড শেয়ারিং চালুর উদ্দেশ্য ছিলো ব্যক্তিগত গাড়ীর ব্যবহার কমানো, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ও সেবার ধরণে নতুনত্ব আনয়ন করা হলেও রাইড শেয়ারিং-এর বিভিন্ন চালকদের আইন, বিধি ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান না থাকায় অন্যান্য বিষয়ের সাথে ঢাকা শহরের বিনা কারণে হর্ণ বাজানোর মাধ্যমে শব্দদূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি ঢাকা শহরে দুটি (সচিবালয় ও আগারগাও) নিরব এলাকা ঘোষণা করা হলেও এটি স¤পর্কে তারা যথাযথভাবে অবহিত নয়। শব্দদূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরকার ২০১৭ সাথে প্রকল্প গ্রহণ করে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তবুও শব্দদূষণ সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাধীনতার পর বিশেষ করে বিগত এক দশকে বাংলাদেশে সকল সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন ও ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এই উন্নয়নে ধারাবাহিকতা এবং ইতিবাচক পরিবর্তনগুলোকে ধরে রাখতে সকলকে গুণগত মানের দিকে নজর এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বয় ও সহযোগিতায় ঢাকা শহরকে শব্দদূষণমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণের। তিনি প্রকল্পের মেয়াদ শেষেও যাতে প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সকলে অংশ নিতে পারে সে কারণে আমাদের সকলের নিজ নিজ ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন থেকে এগিয়ে আসতে হবে।

এরপর প্রকল্প পরিচিতি, সভার উদ্দেশ্য ও প্রত্যাশা, শব্দদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব, রাইড শেয়ারিং নীতিমালা-২০১৭, শব্দদূষণ রোধে বিবিধ আইন, শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ এর গুরুত্বপূর্ণ ধারা সম্বলিত মূল প্রবন্ধ উপন্থাপন করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জনাব খন্দকার মাহমুদ পাশা। এ বিষয়ে বিআরটিএ-এর সহকারী পরিচালক জনাব ফারুক আহমেদ বলেন, রাইড শেয়ারিং নীতিমালা ২০১৭ অনুযায়ী ১৪টি প্রতিষ্ঠানের ২৪১৬০টি মোটরসাইকেলকে এনলিস্টেড সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪টি প্রতিষ্ঠান তা নবায়ন করেছে এবং বাকি ১০ টি প্রতিষ্ঠান করেনি।

সভায় উবার, পাঠাও, সহজ, সিএনএস লিঃ এবং চালডাল.কম-এর প্রতিনিধিবৃন্দ জানান যে, রাইড শেয়ারিং-এর ড্রাইভারদের সড়ক নিরাপত্তাসহ অন্যান্য বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হলেও বিনা কারণে হর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে শব্দ দূষণের বিষয়ে তাদেরকে তেমনভাবে সচেতন করা হয়নি। তারা পরিবেশ অধিদপ্তর, ট্রাফিক পুলিশ ও বিআরটিএ-এর সহযোগীতা নিয়ে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিবেন মর্মে সভাকে অবহিত করেন। তারা এখন থেকে  শব্দদূষণ বিষয়ে বিভিন্ন বার্তা ও টিভিসি ওয়েবসাইট এবং নিজ নিজ এপ্সের মাধ্যমে গাড়িচালক ও সেবাগ্রহিতার মাঝে প্রচার করবেন মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান করেন। একই সাথে এধরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সভায় তাদের স¤পৃক্ত করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
 
সভায় উপস্থিত ট্রাফিক বিভাগের প্রতিনিধিবৃন্দ ঢাকার শহরের শব্দ দূষণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদেও আইন না জানা এবং আইন না মানার বিষয়টি উল্লেখ করে গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করেন। একই সাথে শব্দদূষণ প্রতিরোধে ট্রাফিক পুলিশের সর্বাÍক সহযোগিতার নিশ্চয়তা প্রদান করেন। এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিগণ শব্দ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব পর্যালোচনা করে সকলকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের অনুরোধ জানান।
 
সভাপতির বক্তব্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব মোঃ আশরাফ উদ্দিন বলেন, যেকোন আইন প্রণয়নের পর সেটি যথাযথ বাস্তবায়নে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা থাকে। শুধুমাত্র এনফোর্সমেন্টের মাধ্যমে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি রোড ডিজাইন এমনভাবে করা প্রয়োজন যাতে বিভিন্নমুখী যানবাহন একটি রাস্তা দিয়ে অতিক্রম করতে না হয়। একইসাথে তিনি প্রত্যেকটি সড়কের সাথে বাইসাইকেল লেন তৈরি, হাঁটা ও চলাচলের জন্য ডেডিকেটেড রাস্তা তৈরি, গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করা মর্মে জানান। মহাপরিচালক পরিবেশ অধিদপ্তর শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারি বিভিন্ন বিভাগের পাশাপাশি রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের প্রতিনিধিবৃন্দ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে মর্মে মতামত প্রদান করেন। তিনি মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অন্যান্য বিষয়ের সাথে শব্দদূষণের ক্ষতির বিষয়ে মানুষের মাঝে নিয়মিত প্রচারণা চালানোর বিষয়ে জোর দেন।  

 অন্যান্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জনাব মোহাম্মাদ মাসুদ হাসান পাটোয়ারী, জনাব মুহাম্মদ সোলায়মান হায়দার, জনাব মোহাম্মদ আসাদুল হক, জনাব সৈয়দ নজমুল আহসান, জনাব মোহাম্মদ মইনুল হাসান পিপিএম-সেবা, উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-মতিঝিল বিভাগ), জনাব এস এম শামীম, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-তেজগাঁও), জনাব মোঃ সোহেল রানা, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-মিরপুর), জনাব আশফাক আহমেদ, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-গুলশান), উবারের হেড অফ পলিসি রুহানী ইবসান, পাঠাও প্রতিনিধি মোঃ সাইফুল ইসলাম, ডিজিটাল রাইড লিমিটেড এর প্রতিনিধি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিমিটেড এর প্রতিনিধি মোঃ গোলাম মহিউদ্দিন,  চাল-ডাল লিমিটেড এর প্রতিনিধি জনাব রুবায়েত প্রমুখ।