করোনা সংক্রমন ক্রমহ্রাসমান :প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি সুপারভাইজেশনে সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে
ডা. আয়েশা আক্তার:
৮ মার্চ ২০২০ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিলো। চীনের উহানে করোনা রোগী শনাক্ত হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। চীনের উহান থেকে আস্তে আস্তে অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়ে। চীনের উহান থেকে যখন করোনা ভাইরাস ছড়াচ্ছিলো তখন আমরা নানা রকম প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম যেন আমাদের দেশে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করতে না পারে। সেজন্য দেশের স্থলবন্দর, বিমানবন্দর ও নৌবন্দরসহ পোর্ট অব এন্ট্রিগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমগুলো চালু করি। বিমানবন্দরে টেম্পারেচার মাপা ও স্ক্যানিং কার্যক্রম শুরু করি। আমরা শুরু থেকেই টেম্পারেচার মাপার জন্য পোর্টগুলোতে মেডিকেল সেন্টার বসিয়েছি।
প্রতিটি জেলা- উপজেলার হাসপাতগুলোতে আইসোলেশন বেড তৈরি করা হয়েছিলো। প্রথমে পাঁচটা বেড মিলিয়ে একটা কর্নার তৈরি করা আমাদের প্রস্তুতির মধ্যে ছিলো। তারপর পিপিই ও মাস্কের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। শুরুতে আমাদের এই ব্যবস্থাপনাগুলো ছিলো। পোর্টগুলোতে এন্ট্রি হওয়ার পর হিস্ট্রি নেওয়া কোন দেশ থেকে এসেছে, তাদের টেম্পারেচার আছে কিনা? সেগুলোর ডাটাবেজ তৈরি করা। যাদের তাপমাত্রা পাচ্ছিলাম তাদের আমরা ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে রেখে দিয়েছি। হাজী ক্যাম্পকে আমরা কোয়ারেন্টাইনের স্থান হিসেবে নির্ধারিত করেছিলাম। তখন চীন থেকে যারা ফেরত এসেছে তাদের হাজী ক্যাম্পে কোয়ারেন্টানে রাখা হয়েছে। এখনো আমাদের দেশে এই ব্যবস্থাপনাগুলো আছে, কোয়ারেন্টাইনে রাখা এবং পোর্ট অব এন্ট্রিগুলোতে টেম্পারেচার মাপা। শুধু স্বাস্থ্যখাত নয়, স্বাস্থ্যের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য খাতগুলো একসঙ্গে মিলে কাজ করছি। শুধু স্বাস্থ্য সেক্টর একা এই কাজগুলো করেনি। সবাই মিলে একজোটে কাজ করি।
করোনা মোকাবেলায় সরকারের সাফল্য তো অবশ্যই আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনা ভাইরাস মোকাবেলার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি সফল হয়েছেন। আমরা অনেক আগে করোনার টিকা পেয়েছি। অনেক দেশ এখনো করোনার টিকা পায়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য আমরা করোনা টিকা আগে পেয়েছি এবং দেশের মানুষকে দিতে পারছি। প্রথম যখন করোনা ভাইরাস বাড়লো তখন আইসিইউ সঙ্কট ছিলো, অক্সিজেন সঙ্কট ছিলো। পরবর্তী সময়ে সবই সরকারের পক্ষ থেকে সাপ্লাই দেওয়া হয়েছে এবং মানুষ আইসিইউ এবং অক্সিজেন সেবা পেয়েছে। হাসপাতালগুলোতে বেড সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, আইসিইউ বেডের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। প্রতেকটি হাসপাতালে কতোগুলো আইসিইউ আছে, কতোগুলো বেড আছে, ব্যবস্থাপনা কী হবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করেছিলাম। বিভিন্ন পলিসি মেকিং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করতো কিন্তু মাঠের কার্যক্রমগুলো চালানো হতো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে। মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও মাঠ পর্যায়ে যারা আছেন আমাদের সিভিল সার্জন ও পরিচালক মহোদয়গণ এবং জেলা প্রশাসকগণ একসঙ্গে সবাই মিলে কাজগুলো করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি সুপারভাইজেশনে সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।
করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর দেশে এখন করোনা সংক্রমণের হার দুই শতাংশের নিচে। টানা বারো সপ্তাহ ধরে নতুন রোগী কমছে। সর্বশেষ এক সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন রোগী কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। এ সময়ে মৃত্যু কমেছে ৩১ শতাংশ। চলতি বছরের মার্চে এসে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ দেখা দেয়। মাঝখানে কিছুদিন সংক্রমণ কমে এসেছিলো। কিন্তু গত জুনের শেষে গিয়ে রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশ ছাড়ায়। একপর্যায়ে রোগী শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের ওপরে ওঠে। দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিলো ১০ থেকে ১৫ হাজার। দৈনিক মৃত্যুও দুই শতাধিক হয়েছিলো। গত আগস্টের শুরুর দিক থেকে সংক্রমণে নি¤œমুখী প্রবণতা শুরু হয়। দেশে এখন করোনা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আছে বলা যায়। নতুন করে যেন সংক্রমণ না বাড়ে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। কারণ অনেক দেশে তৃতীয় ঢেউয়ের মতো হচ্ছে। আমাদের দেশে যাতে না হয় সেজন্য আমাদের ব্যবস্থাপনা রয়েছে কিন্তু জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
দেশের সব জায়গায় ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রাম চলছে। আগের চেয়ে অনেক বেশি ভ্যাকসিন আমাদের দেশে আসছে। আমরা সবাইকে দিচ্ছি। দেশকে একেবারে করোনামুক্ত ঘোষণা করতে গেলে আমাদের সংক্রমণের হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে হবে। এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আসছে সেটা বলা যায় কিন্তু হুট করে আবার বেড়ে যেতে পারে তাই সেটার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সেই কারণে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে এবং ভ্যাকসিন নিতে হবে। সংক্রমণ কমের দিকে থাকাটা আমাদের আশার আলো যোগাচ্ছে। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এটা কমের দিকেই থাকবে বলে আশা করা যায়। টিকা কার্যক্রম আমরা মোটামুটিভাবে চালাচ্ছি এবং প্রান্তিক পর্যায়ে চালানোর জন্য ব্যবস্থাপনা আছে। আমাদের পর্যাপ্ত ভ্যাকসিনও আসছে। মানুষ উৎসাহ নিয়ে টিকা নিচ্ছে। টিকা কার্যক্রম ভালো চলছে।
নতুন ঢেউ থেকে বাঁচার জন্য অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে যারা রয়েছে তারা বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর সবকিছু আবার উন্মুক্ত করা হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য প্রতিনিয়ত প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর থেকে নানাভাবে মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে। সেটা সবাইকে মানতে হবে। মেনে না চলার কোনো উপায় নেই। ব্যক্তি ও সামাজিক পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ নিজেকে ও পরিবারকে ভালো রাখতে চাইলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নিজেকে সচেতন হতেই হবে, ব্যক্তিসচেতনতা সবার আগে।
[ডা. আয়েশা আক্তার: অফিসার ইনচার্জ (সহকারী পরিচালক), টিবি হাসপাতাল। ]