বাংলাদেশ-সংযুক্ত আরব আমিরাত যৌথ কমিশন (জেসি)-এর ৫ম সভা ঢাকায় অনুষ্ঠিত

 প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২১, ০২:২৭ পূর্বাহ্ন   |   মন্ত্রনালয়



অদ্য আজ অর্থমন্ত্রী জনাব আ হ ম মুস্তফা কামাল, এফসিএ, এমপি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাননীয় পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী H. E. Ahmed Ali Al Sayegh-এঁর যৌথ সভাপতিত্বে উক্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। হাইব্রিড (সশরীরে এবং ভার্চ্যুয়ালি) পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত ৫ম জেসি সভায় উভয় প্রতিনিধিদলের দলনেতা ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। সভায় উভয় দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি সংস্থার উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ অংশগ্রহণ করেন।

            সভায়  অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে, বাংলাদেশ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত উভয়ই একই সময়ে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে। ১৯৭৪ সালে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংযুক্ত আরব আমিরাতে সরকারী সফরে প্রয়াত শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের ঐতিহাসিক সাক্ষাতের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে একটি শক্তিশালী বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপিত হয়। আমাদের উভয় সরকারই সেই পথ অনুসরণ করে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন সহযোগিতা সংক্রান্ত আমাদের সম্ভাবনাকে আরও কাজে লাগাতে আগ্রহী। মাননীয় অর্থমন্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশী কর্মী ও পেশাজীবীদের আরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য আরো বৃদ্ধির জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতি আহ্বান জানান। 
           অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে করোনা পুর্ব গত এক দশক গড়ে ৭.৪% অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে পরিচিত। আশা করা যায় আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত দেশে পরিনত হবে। বাংলাদেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে সংযুক্ত আরব আমিরাত অভিন্ন বিভিন্ন স্বার্থের বিষয়ে বাংলাদেশকে যে সহযোগিতা ও সমর্থন পেয়েছে তা অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। অধিকন্তু অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি বাংলাদেশী নাগরিক সংযুক্ত আরব আমিরাতে খ্যাতি ও মর্যাদার সাথে সেবা প্রদান করছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন সেক্টরে বিশেষ করে পেশাদার, দক্ষ, আধা-দক্ষ এবং অ-দক্ষ জনশক্তির জন্য এখনও প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের বন্দর এবং বড় অবকাঠামোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ, তথ্য প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ; কৃষি, মহাকাশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী, চিকিৎসা সেবা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পিপিপি ইত্যাদি ক্ষেত্রে শিল্প বিনিয়োগের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

যৌথ কমিশন সভায় উভয় পক্ষ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রের নানাবিধ বিষয় পর্যালোচনা করে এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য নিম্নোক্ত ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করা হয়: (ক) দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন সংক্রান্ত সহযোগিতা, (খ) জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও কনস্যুলার খাতে সহযোগিতা; (গ) বেসরকারি বিমান চলাচল, পর্যটন ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা; (ঘ) বিনিয়োগ সংক্রান্ত সহযোগিতা; (ঙ) আবুধাবী উন্নয়ন ফান্ডের মাধ্যমে সহযোগিতা বৃদ্ধি; (চ) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ খাতে সহযোগিতা; (ছ) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা; (জ) শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা; (ঝ) সামুদ্রিক পরিবেশ উন্নয়ন খাতে সহযোগিতা; (ঞ) কৃষি ক্ষেত্রে সহযোগিতা; (ট) স্বাস্থ্য সেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা খাতে সহযোগিতা; এবং (ঠ) মানবিক ও দাতব্য সহায়তা সংক্রান্ত সহযোগিতা।

 বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে অনুষ্ঠিত ৫ম যৌথ কমিশন সভা পারস্পরিক বোঝাপড়া, বন্ধুত্ব এবং শ্রদ্ধাবোধকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হয়। দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনার পর একটি ‘সম্মত কার্যবিবরণী’ স্বাক্ষরিত হয়। উভয় প্রতিনিধিদলের দলনেতা সম্মত কার্যবিবরণী-তে স্বাক্ষর করেন। পরবর্তী যৌথ কমিশন সভার তারিখ আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তীতে নির্ধারিত হবে, যা আবুধাবিতে অনুষ্ঠানের বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়।