নিরন্তর কাজ করে যাওয়াই সাফল্যের সোপান তৈরি করে

 প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:২৬ পূর্বাহ্ন   |   সফলতার গল্প


মোঃ আঃ রহিম : 
২০০৩ সালের ০৭ই জুলাই জীবনে নিজেকে শুধরে নেওয়ার এক স্মরনীয় দিন। নিজেকে নতুনভাবে নতুন পথে চালিত করার দিন। আমি কুশুরা শাখার ববস্থাপক হিসেবে ১৬ই জুলাই ২০০১ই সালে যোগদান করে ২০০২ সালের নভেম্বর হতে ২০০৫ সালের মাচ পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্পের অর্থ বিতরন করেছি। এপ্রিল ২০০৩এ ধামরাই উপজেলা সদর হতে ৪কিঃমিঃ পশ্চিমে দেপাসাই কেন্দ্রে , প্রকল্প পরিচালক মাহবুবুল আলম মহোদয়ের উপস্থিতিতে উপবৃত্তি বিতরন করেছি। এ কেন্দ্র উপবৃত্তি বিতরন শেষে প্রকল্প পরিচালক মহোদয় ঢাকার উদ্দেশ্যে পূর্ব দিকে রওনা হবেন। দেপাসাই কেন্দে হতে ঢাকা অরিচ মহাসড়কে জয়পুরা  বাসস্ট্যান্ড এসে প্রকল্প পরিচালক আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, “ এখান থেকে কালামপুর বাসস্ট্যান্ড কতদুর? আমি বললাম ৫কিঃমিঃ । স্যার পূর্বদিকে ঢাকা মুখী না হয়ে পশ্চিমদিকে গাড়ী ঘুরিয়ে কালামপুর আসলেন । কালামপুর বাসস্ট্যান্ড  এসে আবার  জিজ্ঞেস করলেন, “ এখান থেকে কুশুরা শাখা কতদুর?” আমি উত্তরে বললাম, “০৬কিঃমি।” এ সময়ে মহোদয় তার ড্রাইভার কে বললেন, “ যে ম্যানেজার গ্রামে গ্রামে ঘুরে উপবৃত্তি বিতরন করে, তাকে সম্মান দেখাতেই হয়। তাকে শাখায় পৌছে দিয়ে আস”। মহোদয় অতিরিক্ত ৫+৬*২= ২২কিঃমিঃ অতিরিক্ত দুরত্ব অতিক্রম করে আমার একজন সিনিয়র অফিসার ব্যবস্থাপককে শাখা পর্যন্ত পৌছে দিয়ে আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। এদিন আমি অবাক হলাম এবং ভীষন সম্মানীত বোধ করলাম। নিজের কাজের প্রতি আরো মনোযোগী হলাম। 
০৭ জুলাই ২০০৩ইং তারিখে  আবার ২/৩ নতুন কর্মকর্তা নিয়ে কুশূরা শাখায় আসেন। ৪ঠা জুলাই থেকে উপবৃত্তি বিতরন শুরু করার কথা। চোখে অঞ্জনী উঠার কারনে উপবৃত্তি বিতরন শুরু করতে পারিনি। এদিন মহোদয় বললেন, “ আমি তিনজন নতুন অফিসার নিয়ে এসেছি এবং তাদের কে বলেছি যে, বাংলাদেশে এক ব্যাংক শাখায় কাজ হয় , তোমাদের কে দেখিয়ে নিয়ে আসি। আমি তোমার প্রমোশনের জন্য তোমার তোমার হেড অফিসে চিঠি পাঠিয়েছি। আর তুমি কাজই শুরু করলে না? আসলে কি জান, আমাদের দেশে যখন কেই সুনাম পায় , তখন সে আর কাজ করেনা। কাজ করা ছেড়ে দেয় । আর এ কারনে আমাদেন দেশের মানুষগুলো বড় হয়না”। মহোদয়ের এ কথায় জীবন গড়ার এক সতর্ক বানী পেয়েছি । মুল্যায়নের আসায় বসে না থেকে প্রকল্প পরিচালক মহোদয়ের এ  উক্তি প্রতিনিয়ত মাথায় নিয়ে অবিরাম নিজের মতকাজ করে চলেছি। অবশ্যই প্রতি নিয়তই কাজের মুল্যায়ন পেয়েছি। জীবনে কাজ যা করেছি তা অন্তত দশগুন মুল্যায়ন পেয়েছি।
২০১৮ সালে মার্কিন গায়ক বব ডিলানের এক লেখায় পড়েছি, “ মুল্যায়নের আসায় থেকোনা”। এ লেখাটি পড়ার পরের বছরই বব ডিলানকে নোবেল পুরস্কারে ভুষিত করা হয়েছে।  ঠিক যেন প্রকল্প পরিচালক জনাব মাহবুবুল আলম স্যারের কথার প্রতিধ্বনিঅ আজ শুধু মনে হয় “ হে অতিত তুমি ভুবনে ভুবনে , কাজ করে যাও গোপনে গোপনে”। কখনোই  মূল্যায়নের আশায় বসে থাকা নয় বরং অবিরাম গতিতে নিরন্তর কাজ করে যাওয়া। বব ডিলান ১৯৭১সালে মার্কিন যুক্তরাষ্টের ম্যাডিসন স্কয়ারে বিশ্ব বিখ্যাত গায়ক জর্জ হ্যারিসনের সঙ্গে গান গেয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সমর্থনে অর্থ সংগ্রহ করেছেন।  বব ডিলান ১৯৭১সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষে গান গেয়ে এবং সুনাম খ্যাতি অর্জন করে থেমে যাননি। তিনি ১৯৭১সালের পূর্ব হতে সফলতার সাথে এখন পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন এবং আমৃত্যু করে যাবেন। তার নিজেন কর্মের কারনেই নোবেল পুরস্কারের মতো বিশ্বের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি। ১৯৭১ হতে ২০১৮সাল পর্যন্ত ৪৭টি বছর তিনি তার সঠিক কাজের মাধ্যমে নিজেকে এগিয়ে নিয়েছেন্।  ৪৭বছর পর পরে ২০১৯ সালে বিশ্ব বিবেক তাকে বিশ্বের সর্বোচ্চ পুরস্কার, নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করেছেন। তার অবিরাম কাজের ফসল হিসাবে বিশ্ব বিবেক তাকে সর্বোচ্চ সম্মানে সম্মানিত করেছেন, সর্বোচ্চ মুল্যায়নে মুল্যায়িত করেছেন। ১৯৭১ সালে-ই বব ডিলান বিখ্যাত ছিলেন । মুল্যায়নের আশায় বসে না থেকে তিনি অবিরাম কাজ করে গিয়েছেন, তার প্রাপ্তি তিনি যথারীতি পেয়েছেন। 
এক জন ছাত্র যখন গনিতে ১০০নম্বর পায়, এটা তার সঠিকতার ফসল। ছাত্র সঠিকতা নিশ্চিত করে বলেই শিক্ষক তাকে ১০০% নম্বর দিয়ে পুরস্কৃত করেন। আসলে এখানে ছাত্রটি আগে সঠিক বলে, তাই শিক্ষক মহোদয় সঠিক বলেন। শিক্ষক মহোদয় ১০০% নম্বর এটা যেমন সঠিক , এর চেয়ে বড় সত্যি হলো ছাত্রটি  ১০০% নম্বর পাওয়ার মত করে পরীক্ষার খাতায় লিখে এবং সঠিকতা নিশ্চিত করেই লিখে। আমাদের কর্মজীবনে পাছে লোকে কিছু বলে এঠা ভেবে বসে থাকা নয় বরং নিজে যেটা সঠক জানি সেটা নিজের মত করে ভেবেচিন্তে সমাপ্ত করে যেতে হবে। কারন আমরা তো জানি কাজটি সঠিক। ভাতের চাল চুলায় উঠালে এক সময় খাবার হিসাবে ভাত পাওয়া যায়। সঠিকভাবে কাজ করলে মুল্যায়ন আসবেই, মুল্যায়ন হবেই। কাজ শেষে মুল্যায়ন ও আনন্দের আওয়াজ আসবেই। এটাই রীতি , এটাই সঠিক নিয়তি এবং এটাই কর্ম প্রাপ্তির সঠিক ধারা। 
লেখকঃ  মোঃ আঃ রহিম , মহাব্যবস্থাপক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক।