মেঘনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ ; ধরা পড়ল ২২ কেজি ওজনের ‘পাখি মাছ’

 প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২১, ০৬:৩৮ অপরাহ্ন   |   সারাদেশ


শনিবার (২৪ জুলাই) সকালে নোয়াখালীর হাতিয়া ও কোম্পানীগঞ্জ উপকূলের হাটগুলোতে ইলিশ মাছে সয়লাব হয়ে যায়। দামও ছিল হাতের নাগালে। এর আগে ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধির জন্য ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল সরকার। ওই নিষেধাজ্ঞা শেষে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে জেলেরা নদীতে আবারও মাছ ধরা শুরু করেছেন। নিষেধাজ্ঞা শেষে মেঘনা নদীতে মাছ শিকারে নেমে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাচ্ছেন উপকূলের জেলেরা। এতদিন পর কর্মে ফিরে আশানুরূপ মাছ পেয়ে খুশি তারা। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর নদীতে মাছ শিকারে নামতে পারায় উপজেলার জেলেপল্লীতে আনন্দের জোয়ার বইছে, হাসি ফুটেছে জেলে পরিবারগুলোতেও। দীর্ঘদিন পরে জেলেরা নদীতে মাছ শিকার করতে পারায় তাদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। জেলে পরিবারেও উৎসবের আমেজ বিরাজ। ঘাটে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান বলেন, ‘ইইলিশ মাছ বড় হতে দেয়ার লক্ষ্যেই এ নিষেধাজ্ঞা ছিল। এছাড়া গভীর সমুদ্রে যেসব মাছ উৎপাদন হয় তার প্রজননের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা কাজে এসেছে বলে মনে হচ্ছে।এ নিষেধাজ্ঞার প্রধান উদ্দেশ্য ইলিশসহ গভীর সমুদ্রের মাছ নিরাপদে মা মাছে রূপান্তর করা। যাতে তারা নিরাপদে নদীতে ডিম ছাড়তে পারে। আমরা ধারণা করছি ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। নোয়াখালী জেলায় মোট ৪০ হাজার জেলে রয়েছে। এর মধ্যে সমুদ্রে মাছ ধরেন ৯ হাজার ৮৬৪ জন জেলে। নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে তাদের প্রত্যেককে ৮০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে।’

মুছাপুর ক্লোজার ঘাট ও চরএলাহীর চরলেংটা ঘাটে প্রচুর ইলিশ এসেছে। চাপরাশিরহাট, পেশকারহাট, বামনী বাজার, বাংলাবাজার, বসুরহাটসহ সব বাজারে মাইকিং করে ইলিশ মাছ বিক্রি করা হয়েছে। নোয়াখালীর উপকূলে কোনো সতর্ক সংকেত নেই। বৈরী আবহাওয়ায় গভীর সমুদ্রে না গিয়ে কাছাকাছি স্থানে মাছ ধরতে বলা হয়েছে।নদী উত্তাল ও আবহাওয়া অধিদফতরের সিগন্যাল থাকায় নদীতে আমরা বেশি দূর যেতে পারিনি। তবুও আজ সকাল পর্যন্ত আমাদের জালে প্রচুর রুপালি ইলিশ ধরা পড়েছে। এবার মাছের আকার তুলনামূলক ছোট। এরপরও ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় আমরা খুশি।এদিকে বসুরহাটের মাছের আড়তে ৩০০, ৫০০ ও ৭০০ টাকা কেজি দরে বিভিন্ন আকারের ইলিশ বিক্রি করতে দেখা গেছে। বিধিনিষেধের কারণে ক্রেতা কম থাকায় বাজারের আশপাশে বেশ কয়েকটি স্থানে মাইকিং করতে শোনা গেছে।



শুক্রবার (২৪ জুলাই) মধ্যরাতে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে মেঘনা নদীতে জেলেদের জালে সাত ফুট লম্বা এক সামুদ্রিক মাছ ধরা পড়েছে  পিঠে পাখনা থাকা ‘পাখি মাছ’ ।প্রায় ২২ কেজি ওজনের মাছটি উপজেলার পাটারিরহাটের জারিরদোনা মৎসঘাট এলাকায় বিক্রি করা হয়। মাছটি আড়াই হাজার টাকায় এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে স্থানীয়রা কিনে ভাগ করে নেন। লক্ষ্মীপুরের মাছ ব্যবসায়ী মো. গোফরান সাড়ে ২ হাজার টাকায় মাছটি কিনে নেন। তিনি ঢাকায় নিয়ে মাছটি চড়া দামে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এসময় রায়পুর কারিমিয়া মোহাম্মদিয়া মাদরাসার মোহতামিম মাওলানা আ হ ম নোমান সিরাজি ওই মাছ তার কাছে বিক্রি করার জন্য ব্যবসায়ীকে অনুরোধ করেন। পরে তিনি একই দামে মাছটি কিনে নেন। একপর্যায়ে তিনিসহ ১০ জন মিলে মাছটি ভাগ করে নেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, মাছটি দেখতে বিরল প্রজাতির মনে হয়। এ অঞ্চলে মাছটি পুরোই অপরিচিত। মেঘনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সমুদ্র থেকে মাছটি চলে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মাছটি সামুদ্রিক মাছ। পাখনা থাকায় মাছটিকে পাখি মাছ বলা হয়। বিরল এ মাছ আগে কখনো এ অঞ্চলের মানুষ দেখেনি। এজন্য ব্যবসায়ীকে অনুরোধ করে স্থানীয়রা মাছটি কিনে নিয়েছেন।