জেনারেশন গ্যাপ আর চিন্তা-চেতনার পার্থক্য কি এক বিষয়?

 প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২২, ১২:৫২ অপরাহ্ন   |   সম্পাদকের কথা


(এহছান খান পাঠান)
এমন নয় যে, অন্য কোনো পেশায় না যেতে পেরে আমি সাংবাদিক হয়েছে। কিছু কমিটমেন্টের কারণে আমি বরং সাংবাদিকতা পেশা বেছে নিয়েছি। সমাজের সামগ্রিক সিস্টেমকে সাংবাদিকতা দিয়ে চ্যালেঞ্জ করা যায়, এটা বিশ্বাস করেই আমি এ পেশায় এসেছিলাম। 
কর্মজীবনের শুরু থেকেই কেনো যেন যেখানেই যাই ছুটি-ছাটা জোটে না কপালে। আজ ছুটি ছিল, অতীব জরুরি না হলে কারো ফোন ধরব না পাক্কা নিয়ত করে রেখেছি। হঠাৎ এক দাদার ফোন। প্রাক্তন বড় মাপের সরকারী চাকুরে, এখন রিটায়ার্ড। দাদি খানিকটা সেকেলে গৃহিণী। উভয়েই ধার্মিক, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে এক ওয়াক্ত-ও কাযা হয় না। এর সাথে আছে কোরান তেলাওয়াত। গরীবদের মাঝে দানেও উদার হস্ত। স্বস্ত্রীক হজ্ব করেছেন ২ বার।
সবই ঠিক আছে; তবে দাদা-দাদির চিন্তা তাদের সন্তানরা ধর্ম সম্পর্কে উদাসীন ,ধর্ম-কর্মের নাম শুনলেই তাদের এ্যালার্জি। মানুষ বৃদ্ধ হলে এমনিতেই খটমট স্বভাবের হয়ে যায়। তাদের সন্তান এবং নাতি নাতনীদের ধারনা যে বয়োবৃদ্ধ দুজন ক্যাটক্যাট করছে। এর কারন একটাই, “জেনারেশন গ্যাপ” বাড়ির সবার ধারণা।
ইন্টারনেটে একটা ভিডিও পাওয়া গেছে তার নাতির। পুলিশি ঝামেলার সঙ্গে যোগ হযেছে মহল্লার লোকজনের উৎপাত। এরপরে ঘটনা সংক্ষিপ্ত, ঘটনা ধামাচাপা দিতে বেসামাল টাকা খরচ হলো, বাড়ি কর্তাসহ সবাই নাতিকে বাচানোর জন্য সব ধরনের চেষ্টা তদবির চালিয়ে গেল। এর পর সবাই হাপ ছেড়ে বাঁচল আর চিন্তা করল “যাক মান সম্মান তো রক্ষা হলো”।
আমি ভাবছি এত ভালো ক্যারিয়ার, ভালো ফ্যামিলি সবই ঠিক আছে কিন্তু কেনো এমনটা হলো? আমি খুজে পেলাম দাদা তার সন্তানদের পাঠ্যপুস্তকের জাহাজ বানানোর একটা ট্রেন্ড শুরু করেছিলেন। সবার সাথে প্রতিনয়ত চালাতেন খোঁচাখুচি কার সন্তান কোন ভালো স্কুলে পড়ে, ক্লাসে কততম হলো ইত্যাদি নিয়ে সাথে অফিসের কলিগ, বন্ধু, আত্মিয়দের ,পাশের ফ্লাট, এলাকাতো ভাবী, বান্ধবী ইত্যাদিদের সাথে । সন্তান ক্লাসে প্রথম না হলে, ভালো স্কুলে না পড়লে তাদের মান সম্মান শেষ বলে হাপিত্যেস করতেন । দাদা চেয়েছেন সন্তান হোক টাকা বানানোর মেশিন, তথাকথিত স্ট্যাটাসের সিম্বল। সুতরাং প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার সাথে সাথে সন্তানরা তা-ই হয়েছে। বড় ছেলে ব্যারিস্টার, একমাত্র মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর ছোট ছেলে বিসিএস দিয়ে চাকরীতে জয়েন করেছে। যদিও ততদিনে হারিয়ে গেছে তাদের নীতি নৈতিকতা, বিবেক।
বাবা-মা ধার্মিক, সৎ হওয়া সত্ত্বেও সন্তানরা ধর্ম বিদ্বেষী, নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত, স্বার্থান্বেষী, অসৎ। জেনারেশন গ্যাপ বলে যা চালানো হচ্ছে তা হলো চিন্তা চেতনার পার্থক্য। 
যেহেতু আমি খারাপ কাজ করি নাই সেহেতু আমার সন্তান-ও তা করতে পারে না। আমার সন্তান, নাতি নাতনীরা কখনো খারাপ কিছু করতে পারে না, আমার ফ্যামিলি রয়্যাল সুতরাং এই ফ্যামিলির লোক এই ধরনের কাজ করতে পারে না ইত্যাদি চিন্তা ভাবনা থেকে সরে এসে প্রত্যেকটা বাবা-মায়ের উচিত সন্তানদেরকে সঠিক শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।
(এহছান খান পাঠান, নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক অর্থনীতির কাগজ)